অতি গুরুত্বপূর্ণ এই বিভাগটিতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসক থাকেন না। বেশিরভাগ এসিই নষ্ট। সপ্তাহে একদিন ইকো ছাড়া বিশেষ কোন সেবা নেই এখানে। ফলে হৃদরোগীরা এখানে ভর্তি হতে সাহস পাচ্ছেন না।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) সাত মাস ধরে পাঁচটি এসি নষ্ট হয়ে আছে। দুইটি ইসিজি মেশিনের মধ্যে একটি নষ্ট, অপরটি জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। সপ্তাহে একদিন ইকো ছাড়া বিশেষ কোন সেবা নেই এখানে। নেই রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার চিকিৎসকও। অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদ থাকলেও এই মানের কোনো চিকিৎসক নেই এখানে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ সুযোগ সমৃদ্ধ কার্ডিওলোজি বিভাগ থাকবে না, এটা মেনে নেয়া যায় না।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত দুই দিনে ১৪টি বেডের ১০টিই ফাঁকা রয়েছে। সিসিইউতে যে ধরনের বিশেষ সেবা থাকার কথা তা এখানে নেই। তাই রোগীদের বাড়তি আগ্রহ নেই এই ওয়ার্ডে। অন্যান্য ওয়ার্ডে সার্বক্ষণিক ডিউটি ডাক্তার, সহকারী রেজিস্ট্রার ও রেজিস্ট্রার থাকলেও এখানে তা নেই। মাত্র দুইজন সহকারী অধ্যাপক পদমর্যাদার চিকিৎসক রয়েছে। তারা হচ্ছেন ডা. স ম দেলোয়ার হোসেন এবং ডা. মো. মোস্তফা কামাল। ডা. দেলোয়ার হোসেন দিনে দুবার রাউন্ড দিয়ে রোগী দেখেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ, পেশাজীবী চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা ও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) খুলনা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ২৫০ শয্যার হাসপাতালে আলাদা কোন সিসিইউ নেই। কিন্তু রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এটি চালু করা হয়েছে। এখন ৫শ’ শয্যা চালু হয়েছে। অতি শিগগিরই পূর্ণ জনবল ও সেবা পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে বিএমএ খুলনার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, সিসিইউ ইউনিটটি একটি বিশেষ ব্যবস্থাপনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চালু রেখেছে। সিসিইউ বলতে যা বোঝায় এখানে তার কিছুই নেই। মনিটরিং ব্যবস্থায় সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও অন্যান্য জরুরি সেবা এখানে নেই। সিনিয়র চিকিৎসকদের পদই সৃষ্টি করা হয়নি। খুলনার মানুষের কার্ডিওলোজি সেবার পাশাপাশি মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের পড়াশোনার জন্যও সিনিয়র চিকিৎসকের প্রয়োজন, যা থেকে শিক্ষার্থীরাও বঞ্চিত হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম মঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ‘এসি নষ্ট থাকার বিষয়টি পিডব্লিউডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। এখন তারা কখন ঠিক করবে তারাই ভালো বলতে পারবেন। জনবল সংকট রয়েছে দীর্ঘবছর ধরে। খাতা কলমে হাসপাতালের জন্য সিসিইউতে আলাদা বিভাগ চালু নেই। রোগীদের স্বার্থে এটা খোলা হয়েছে। বর্তমানে ৫শ’ বেড চালু হওয়ায় এখানে পদ সৃষ্টি ও চিকিৎসক দেয়া সম্ভব হলে ইউনিটটি ভালোভাবে চালু করা যাবে।’
এদিকে ভুক্তভোগী এক রোগীর আত্মীয় জানান, এই হাসপাতালের সিসিইউতে সার্বক্ষণিক কোন চিকিৎসক পাওয়া যায় না। কিছু হলে নার্সদের কাছে বলা হচ্ছে, তারাই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ইসিজি অনেক সময় বাইরে থেকে করে আনা লাগছে। এখানকার সিসিইউ সেবার মান খুবই নাজুক বলে মনে করেন তিনি।